স্পোর্টস ডেস্ক: কানাডার নাগরিক ও সেখানকার খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড নিয়ে ব্যাপক টানাপোড়েন চলছে কানাডা ও ভারতের মধ্যে। এ প্রসঙ্গে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, তার দেশ ভারতের সঙ্গে বিদ্যমান কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও দৃঢ় ও গভীর করতে আগ্রহী, তবে হরদীপ হত্যাকাণ্ডের তদন্তের ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) কানাডিয়ান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে দেওয়া এক ভাষণে ট্রুডো বলেন, ভারত একটি উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি ও ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গত বছর আমরা ইন্দো-প্রশান্ত অঞ্চলের সঙ্গে কানাডার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিষয়ক নীতি উপস্থাপন করেছি। সেই নীতি অনুসারে দেশের স্বার্থেই ভারতের সঙ্গে আমাদের কূটনৈতিক বন্ধন আরও দৃঢ় করতে হবে ও আমরা এ বিষয়ে মনযোগী।
‘তবে কানাডার আইন ও সংবিধানকে লঙ্ঘন করে এমন কোনো কর্মকাণ্ড আমরা সমর্থন করতে পারি না। যা ঘটেছে, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত আমরা চাই ও এক্ষেত্রে ভারতের উচি কাজ করা প্রয়োজন।’
গত জুনে কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া রাজ্যের রাজধানী ভ্যানকুভারে একটি গুরুদুয়ারার (শিখ ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয়) সামনে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন খালিস্তানপন্থী নেতা হরদীপ সিং নিজ্জার। ১৯৭৭ সালে ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের জলন্ধর জেলা থেকে কানাডা গিয়েছিলেন হরদীপ, পরে তিনি সেখানাকার নারিকত্বও অর্জন করেন।
এদিকে, শিখদের ঘোষিত রাষ্ট্র খালিস্তান কায়েমের জন্য তৎপর দুই রাজনৈতিক গোষ্ঠী খালিস্তান টাইগার ফোর্স এবং শিখস ফর জাস্টিস কানাডা শাখার একজন জ্যেষ্ঠ নেতা হরদীপ ছিলেন ভারতের একজন তালিকাভুক্ত আসামি। হরদীপকে দেশে ফিরিয়ে বিচারের মুখোমুখি করাতে আগ্রহী ছিল ভারত।
বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার কারণে খালিস্তান টাইগার ফোর্স ও শিখস ফর জাস্টিস, এ দুই সংগঠনই ভারতে নিষিদ্ধ। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডায় উভয় সংগঠনই বেশ সক্রিয়।
ভারতের পরেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক শিখ বসবাস করেন কানাডায়। দেশটির মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশই শিখ। গত কয়েক বছরে ভারতের একাধিক আহ্বান সত্ত্বেও খালিস্তান টাইগার ফোর্স ও শিখস ফর জাস্টিসের কর্মকাণ্ডে কখনো বাধা দেয়নি কানাডার সরকার।
এই ইস্যুতে কানাডা বক্তব্য হলো, যেহেতু দেশটির সংবিধানে শান্তিপূর্ণ অহিংস আন্দোলন বৈধ, তাই এক্ষেত্রে কানাডিয়ান সরকারের পক্ষে সংবিধানের বাইরে গিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
ভারতের সঙ্গে কানাডার সাম্প্রতিক যে দ্বন্দ্ব, তার সূত্রপাত এখান থেকেই। গত ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনেও দুই দেশের শীতল কূটনৈতিক সম্পর্কের আঁচ পাওয়া গিয়েছিল।
সম্মেলন শেষে নয়াদিল্লি থেকে ফেরার এক সপ্তাহ পর, ১৮ সেপ্টেম্বর ১৮ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সে ট্রুডো বলেন, তার দেশের গোয়েন্দারা হরদীপ হত্যায় ভারত সরকারের সংশ্লিষ্টতার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছেন।
কানাডার জন্য এই ঘটনাটি যে তীব্র অবমাননাকর, তা বোঝাতে গিয়ে পার্লামেন্ট ভাষণে ট্রুডো বলেন, কানাডার মাটিতে একজন কানাডীয় নাগরিককে হত্যার সঙ্গে বিদেশি সরকারের জড়িত থাকার বিষয়টি আমাদের সার্বভৌমত্বের অগ্রহণযোগ্য লঙ্ঘন।
ভারতের সরকারের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, স্বাধীন, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থা যেভাবে কাজ করে, হরদীপ হত্যা সেই মৌলিক নিয়মনীতির পরিপন্থী।
ট্রুডোর এমন অভিযোগের পরদিনই কানাডায় নিযুক্ত ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (আরএডব্লিউ বা র) কানাডা শাখার প্রধানকে বহিষ্কার করে ট্রুডো সরকার।
অন্যদিকে, শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তাকে বহিষ্কারের ঘটনায় ব্যাপক ক্ষুব্ধ ভারত পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে পরদিনই দিল্লির কানাডা দূতাবাসের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককে ভারত ত্যাগের নির্দেশ দেয়। পর থেকেই নজিরবিহীন টানাপোড়েনে জড়িয়ে পড়েছে কানাডা ও ভারত।
সূত্র: বিবিসি